বাংলাদেশ থেকে বেসরকারিভাবে কর্মী যাওয়া শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ই-৭ ভিসায় (E-7 Visa South Korea) ৪৮ কর্মীর প্রথম দল যাচ্ছে দেশটিতে। বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি ‘বিজনেস এলায়েন্সে’ (Business Alliance) র মাধ্যমে দেশটিতে যাচ্ছেন এই কর্মীরা। বুধবার দুপুর ১ টা ৩৫ মিনিটে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে থাই এয়ারলাইন্সের টিজি-৩২২ ফ্লাইটে করে দক্ষিন কোরিয়ার উদ্দেশ্য ঢাকা ত্যাগ করে কর্মীরা।
এসময় বিমান বন্দরে কর্মীদের আনুষ্ঠানিক বিদায় জানান জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (Bureau of Manpower, Employment and Training (BMET)’র (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহিদুল আলম এনডিসি ও রিক্রুটিং এজেন্সির (Recruiting Agencies) কর্মকর্তারা। বেসরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফ্লাইট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএমইটি মহাপরিচালক শহিদুল আলম এনডিসি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া কর্মীদের সবচেয়ে বেশি বেতনের দেশ হতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বেতন কত?
বেসরকারিভাবে দেশটিতে যাওয়া এই ৪৮ দক্ষ কর্মীর প্রাথমিক বেতন ২ লক্ষ টাকার অধিক। একইসাথে ওভারটাইম করলে এদের বেতন হবে ৪ লক্ষ টাকারও বেশি। বিএমইটি মহাপরিচালক আরো বলেন, “গেল ১৪ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গেছে ৮৮ লক্ষ কর্মী। একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৩ বিলিয়ন ডলার। যা একটি বড় সংখ্যা।
২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গেল ১৯ মাসে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে ২৩ লাখ কর্মী। তবে এদের ৫০ শতাংশ কর্মী দক্ষ হলে দেশে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আসত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে দীর্ঘ ৮ মাস প্রচেষ্টার পর বেসরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় দক্ষ কর্মী পাঠাতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বিজনেস এলায়েন্সের (Private Recruiting Agency Business Alliance) ম্যানেজিং পার্টনার এস.আই মজুমদার সিরাজ।
বেসরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বিএমইটি থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পেলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিতি বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা পাননি বলেও জানান মজুমদার সিরাজ। তাই সরকারের খাত সংশ্লিষ্টদের প্রতি এক্ষেত্রে আরো আন্তরিক হতে অনুরোধ জানান তিনি। যাতে পরবর্তিতে বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলো থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) (Bangladesh Association of International Recruiting Agencies)- এর যুগ্ন মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, “দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই, মধ্যে প্রাচ্যে যেখানে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কাজ করছে কর্মীরা সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮ ঘন্টা কাজে কর্মীদের বেতন ২ লাখ টাকা।” তাই দেশে রেমিট্যান্স আহরণে দক্ষিণ কোরিয়া একটি মাইল ফলক হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও বেসরকারিভাবে দক্ষিন কোরিয়ায় কর্মী পাঠাতে যেসকল প্রতিবন্ধকতা আছে তা উত্তরনের জন্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন টিপু সুলতান। যাতে কম সময়ে দেশটিতে যেতে পারেন দক্ষ রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। দক্ষিন কোরিয়াগামী এই কর্মীদের কয়েকজন জানান, দীর্ঘ পরিশ্রম ও পরিক্ষায় দক্ষতার সাথে উত্তীর্ণের মাধ্যমে ই-৭ ভিসায় (E-7 Visa South Korea) দেশটির হুন্ডাই কোম্পানিতে কাজ নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে?
বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে তাদের খরচ গুনতে হয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা কাজের বিনিময়ে ২ লাখ টাকা বেতনে দক্ষিন কোরিয়ায় যেতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন এই কর্মীরা। মূলত দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ২০০৭ সালে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি হয়।
এই চুক্তির ভিত্তিতে ২০০৮ সাল থেকে দেশটিতে দক্ষ কর্মী পাঠানো শুরু করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (Bangladesh Overseas Employment and Services Limited) (বোয়েসেল) ও দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস অব কোরিয়া (Human Resources Development Service of Korea) (এইচআরডি কোরিয়া, HRD Korea) কর্মী পাঠানোর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (Employment Permit System) (ইপিএস) আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্প খাতে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো হয়। কয়েক ধাপে প্রার্থী নির্বাচনের পর দক্ষ কর্মীরা সেখানে যাওয়ার সুযোগ পান। গত বছরের শেষ নাগাদ প্রায় পাঁচ হাজার দুইশত বাংলাদেশি কর্মী দঃ কোরিয়ায় যান।
যা এরই মধ্যে অন্যান্য বছরের তুলনায় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ জন বাংলাদেশি দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন, ঢাকায় নিযুক্ত কোরীয় রাষ্ট্রদূত লি জাং কিউন। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে এবছর কৃষি ভিসায় (Agricultural Visa South Korea) অতিরিক্ত আরও ৫০০০ মৌসুমি কর্মী পাঠানোর সুযোগ আছে দক্ষিন কোরিয়ায়।